নিদর্শনঃ১
যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালের আশংখা রাখে এবং তার পালন কর্তার রহমত প্রত্যশা করে,সে কি তার সমান, যে এরুপ করে না, বলুন যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা ভাবনা কেবল তারাই করে যারা বুদ্ধিমান ।(ঝুমার-৯)
নিদর্শনঃ২
কেবল তারাই আমার আয়াত সমুহের প্রতি ইমান আনে, যারা আয়াতসমূহদ্বারা উপদেশ প্রাপ্ত হয়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং অহংকার মুক্ত হয়ে তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে । তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে । তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে । কেউই জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কি লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরুষ্কার স্বরুপ ।
(আস-সাজদা-১৫-১৭)
নিদর্শনঃ৩
হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে দন্ডায়মান হন কিছু অংশ বাদ দিয়ে, অর্ধরাত্রি বা তদপেক্ষা কিছু কম, অথবা তদপেক্ষা বেশি এবং কোরআন আবৃতি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্ট ভাবে, আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বানী, নিশ্চয় ইবাদতের জন্য রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারনের অনুকূল ।(মুযযামমিল-১-৬)
নিদর্শনঃ৪
আপনার পালনকর্তা জানেন, আপিন ইবাদেতর জন্য দন্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সংগীদের ও একটি দল দন্ডায়মান হয়-------- (মুযযামমিল-২০)
নিদর্শনঃ৫
যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা ঈমান এনেছি, কাজেই আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও আর আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। তারা ধৈর্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ সম্পাদনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।(আল-ইমরান-১৬-১৭)
নিদর্শনঃ৬
রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলেত থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে; এবং যারা বলে, হে আমার পালনকর্তা, আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ; বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা।(আল ফুরকান-৬৩-৬৬)
নিদর্শনঃ৭ রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন, এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য, হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেবন প্রশংসিত স্থানে।(আল ইসরা-৭৯)
নিদর্শনঃ৮ আল্লাহ
ভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও প্রস্রবনে ।
এমতাবস্থায় যে, তারা গ্রহন করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন ।
নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ, তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থন করত ।
(আয-যারিয়াত-১৫-১৮)
হাদীছঃ১ আব্দুল্লাহ
ইবন আমর ইবন আস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেনঃ আল্লাহ পাকের নিকট সর্বাধিক প্রিয় সালাত হল দাঊদ(আঃ)এর সালাত ।
আর আল্লাহ পাকের নিকট সর্বাধিক প্রিয় সিয়াম হল দাঊদ(আঃ)এর সিয়াম ।
তিনি (দাঊদ(আঃ)) অর্ধরাত পর্যন্ত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং রাতের এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন ।
তিনি একদিন সিয়াম পালন করতেন, এক দিন করতেন না ।(বুখারী-১০৬৪ ইঃফাঃ)
হাদীছঃ২
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার গ্রীবাদেশে তিনটি গিট দেয় ।প্রতি
গিটে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমাদের সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত ।তারপর
সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্বরণ করে একটি গিট খুলে যায়, পরে ওযু করলে আর একটি গিট খুলে যায়, তারপর সালাত আদায় করলে আর একটি গিট খুলে যায় ।তখন
তার প্রভাত হয়, প্রফুল্ল মনে ও নির্মল চিত্তে ।অন্যথায়
সে সকালে উঠে কলুসিত মনে ও অলসতা নিয়ে ।
(বুখারী-১০৭৬ ইঃফাঃ)
হাদীছঃ৩
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষনা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব ।
কে আছে এমন, যে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দিব ।
কে আছে এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব ।(বুখারী-১০৭৯ ইঃফাঃ)
হাদীছঃ৪
আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাত্রি কালে ঘুম থেকে উঠে নিজের স্ত্রীকে জাগায়, অতপর তারা একত্রে দুই রাকআত সালাত আদায় করে-তাদের নাম আল্লাহর নিকট যিকিরকারী ও যিকিরকারিনীদের দপতরে লিপিবদ্ধ করা হয় ।(আবু দাউদ-১৪৫১,নাসাঈ,ইবনু মাযাহ)
“““হাদীছঃ৫ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, প্রথম যখন রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমন করেন তখন জনগন তাকে দেখার জন্য ভীর জমায় ।
তাদের মধ্য আমি ও ছিলাম ।
আল্লাহর কসম ।
তার চেহারা মোবারকে আমার দৃষ্টি পড়া মাত্রই আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, এই জ্যোতির্ময় চেহারা কোন মিথ্যাবাদী লোকের হতে পারে না ।
রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সর্বপ্রথম যে কথা আমার কানে পৌঁছেছিল তা ছিলঃ “হে জনমন্ডুলী! তোমরা(দরিদ্রদেরকে)খাদ্য খাওয়াতে থাকো, আত্নীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখ, (মানুষকে) সালাম দিতে থাকো এবং রাতে নামায আদায় করো
যখন
লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে ।
তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে”
হাদীছঃ৬
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ“ জান্নাতে এমন কক্ষ রয়েছে যার ভিতরের অংশ বাহির হতে এবং বাহিরের অংশ ভিতর হতে দেখা যায়”-এ কথা শুনে হযরত আবু মুসা আশয়ারী(রাঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এটা কাদের জন্য” উত্তরে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদের জন্য যারা নরম কথা বলে,(দরিদ্রদের)খানাখেতে দেয় এবং রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন তারা আল্লাহর ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাকে ।(আহমাদ)
হাদীছঃ৭
রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ যখন শেষ তৃতীয়াংশ রাত্রি অবশিষ্ট থাকে তখন প্রতি রাতে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’য়ালা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেনঃ “কোন তওবাকারী আছে কি? আমি তার তওবা কবুল করবো ।
কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো ।
কোন যাঞ্চাকারী আছে কি? আমি তাকে প্রদান করবো” ফজর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা এরুপই বলতে থাকেন”””(তাফসীর ইবনে কাসির-যারিয়াত)
হাদীছঃ৮
হযরত ইবনে মাসউদ(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ “আল্লাহ তায়ালা দুই ব্যক্তির উপর খুবই খুশি হন ।
এক হলো ঐ ব্যক্তি যে শান্তি ও আরামের নিদ্রায় বিভোর থাকে কিন্তু হঠাৎ তার আল্লাহর নিয়ামত ও শাস্তির কথা স্মরন হয়ে যায়
এবং
তখনই সে বিছানা ত্যাগ করে উঠে পরে এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে দেয় ।
দ্বিতীয় হলো ঐ ব্যক্তি যে জিহাদে লিপ্ত রয়েছে, কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে অনুভব করে যে, মুসলমানরা পরাজয়ের সন্মূখীন হয়ে পড়েছে ।
তখন সে চিন্তা করে যে, যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে গেলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন এবং সামনে অগ্রসর হলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন ।
সুতরাং সে সন্মূখে অগ্রসর হওয়াই পছন্দ করলো এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্তই থাকলো ।
শেষ পর্যন্ত সে স্বীয় গর্দান আল্লাহর পথে লুটিয়ে দিলো ।
আল্লাহ তায়াল গর্বভরে ফেরেশতাদেরকে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে বলেন এবং তার প্রশংশা করেন ।(মুসনাদে আহমাদ)
হাদীছঃ৯
হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ(রাঃ)হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তায়ালা প্রথম ও শেষের সমস্ত লোককে একাত্রিত করবেন ।
তখন একজন ঘোষনাকারী(ফেরেশতা) উচ্চ স্বরে ঘোষনা করবেন যার ঘোষনা সমস্ত সৃষ্টজীব শুনতে পাবে ।
তিনি ঘোষনা করবেনঃ “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সন্মানিত কে তা আজ সবাই জানতে পারবে” আবার তিনি ঘোষনা করবেনঃ “যাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকত(অর্থাৎ যাহারা তাহাজ্জুদ পড়তো) তারা যেন দাঁড়িয়ে যায়” তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে ।
কিন্তু তাদের সংখ্যা হবে খুবই কম ।
(আবি হাতিম)
আল্লাহ আপনি সকল মুসলীম ভাই এবং বোনকে বেশী বেশী করে ছলাত আদায় করার তৌফিক দান করুন-আমীন
ReplyDelete