“আহলে হাদীছ” নামক দলের ভাইয়েরা বলেন, রাসুল(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) কে মক্কার কাফিররা তাদের রাজ্যের নেতা বানাতে চেয়েছিল কিন্তু তিনি
তা গ্রহন করেন নাই, সুতরাং যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার নামে রাজ্যের
(রাষ্ট্রের) নেতা হতে চায় তারা সটিক পথে নাই ।
তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন হচ্ছে তারা এই বর্ণনাটির পুরো অংশ বর্ণনা না
করে শুধু “রাসুল(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মক্কার কাফিররা তাদের
রাজ্যের নেতা বানাতে চেয়েছিল কিন্তু তিনি তা গ্রহন করেন নাই” এতটুকু বলেন
কেন?
আসুন দেখি সম্পূর্ন বর্ণনাতে কি বলা হয়েছেঃ
ওতবা রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে গিয়া বসিল । তারপর
তাহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, হে ভাতিজা! আমাদের কওমের সকলেই তোমার মর্যাদার
কথা অবগত । তুমি অভিজাত কবিলার লোক । তবে তুমি এমন একটি বিষয় প্রচার
করিতেছ, যাহার কারনে কওমের মধ্যে বিভেত-বিশৃঙ্খলা এবং অনৈক্যের সৃষ্টি
হইয়াছে । তুমি কওমের নেতৃস্থানীয় জ্ঞানী লোক দিগকে নির্বোধ বলিয়া অভিহিত
করিয়াছ । তাহাদের উপাস্য দিগকে নানাভাবে সমালোচনা করিতেছ । তাহাদের ধর্ম
বিশ্বাসকে ভ্রান্ত এবং বাতিল বলিয়া ঘোষনা করিয়াছ । তাহাদের পূর্ব
পুরুষদিগকে কাফির আখ্যা দিয়াছ । তুমি আমার কথা শুন, আমি তোমাকে কয়েকটি
প্রস্তাব দিতেছি, তুমি সেগুলি নিয়া চিন্তা কর । হয়ত তাহার যে কোন একটি
তোমার নিকট গ্রহনযোগ্য হইবে । তাহার কথা শুনিয়া রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলিলেন, আচ্ছা বল দেখি তোমার প্রস্তাব গুলি শুনি ।
ওতবা ওরফে অলীদ বলিল, হে ভাতিজা ! তুমি যাহা প্রচার করিতেছ,যদি তাহার
বিনিময়ে তোমার ধন-সম্পদ লাভের ইচ্ছা থাকে তাহা হইলে আমরা তোমাকে এই পরিমান
ধন-সম্পদ দান করিব যে, তুমি হইবে আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনি ব্যক্তি ।
আর যদি তুমি মর্যাদার আকাঙ্খী হও,তাহা হইলে বল, আমরা তোমাকে আমাদের নেতা
হিসাবে মানিয়া লইব । আমাদের যাবতীয় বিষয় ব্যাপার তুমিই ফায়সালা করিবে । আর
যদি বাদশাহ হইতে চাহ তবে বল, আমরা তোমাকে আমাদের রাজ্যের বাদশাহ বানাইয়া
দিব । আর যদি তোমার উপর কোন জ্বিন-ভূতের আছর থাকে যাহা তুমি তাড়াইতে
পারিতেছ না, তাহাও বল, আমরা উত্তম চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়া তোমাকে সুস্থ
করিয়া দিব । এ জন্য যত বেশী অর্থের প্রয়োজন হউক না কেন আমরা তাহা খরচ করিব ।
রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওতবার কথা গুলি শুনিবার পর
বলিলেন, হে আবু অলীদ ! তোমার কথা কি শেষ হইয়াছে? তাহা হইলে এইবার আমার কথা
শুন । ইহার পর রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুরা হা-মীম
সিজদাহর প্রথম হইতে আবৃতি শুরু করিলেন, “পরম দয়ালু ও কৃপাময় আল্লাহর নামে
শুরু করিতেছি । হা-মীম । এ কিতাব দয়ালু ও দয়াময়ের তরফ হইতে অবতীর্ণ । ইহা
এক কিতাব । বিশদ ভাবে বিবৃত হইয়াছে ইহার আয়াত সমূহ আরবী ভাষায় কুরআন রুপে
জ্ঞানীদের জন্য –সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রুপে ; কিন্তু উহাদের অধিকাংশই
বিমূখ হইয়াছে । কাজেই উহারা শুনিবে না । উহারা বলে ,তুমি যাহার প্রতি
আমাদিগকে আহবান করিতেছ, সেই ব্যাপারে আমাদের অন্তর আবরনে ঢাকা, কর্ণে
রহিয়াছে বধিরতা এবং তোমার ও আমাদের মধ্যে অন্তরালের যবনিকা কাজ করিতেছে ।
সুতরা তুমি তোমার কাজ কর এবং আমরা আমাদের কাজ করি”
রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবৃতি করিয়া যাইতেছিলেন আর
ওতবা তাহার দুই হাত পিছনের দিকে মাটিতে রাখিয়া আরামের সাথে বসিয়া শুনিতেছিল
। সিজদার আয়াত পাঠ করার পর রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠিয়া
সিজদা করিলেন । ইহার পর বলিলেন, হে আবু অলীদ ! তুমি কিছু শুনিতে
চাহিয়াছিলে আমি শুনিয়া দিলাম । এখন তুমি জান আর তোমার কাজ জানে ।
ওতবা উঠিয়া পড়িল এবং তাহার সংগীদের নিকট ফিরিয়া গেল । তাহাকে দেখিয়া
তাহার সংগীরা বলাবলি করিতে লাগিল যে, আল্লাহর কসম, আবুল অলীদ যাইবার সময় যে
চেহারা লইয়া গিয়াছিল, সেই চেহারা লইয়া কিন্তু আসিতেছে না । ওতবা আসিবার পর
সংগীরা জিজ্ঞাসা করিল যে, কি খবর লইয়া আসিয়াছ? সে বলিল, খবর হইল, আমি এমন
বাক্য শুনিয়াছি যা ইতিঃপূর্বে কোন দিনই শুনি নাই । আল্লাহর কসম তাহা কবিতাও
নহে, যাদু মন্ত্রও নহে । তোমরা আমার কথা শুন । উহাকে উহার অবস্থার উপরই
ছাড়িয়া দাও । যে বাক্য আমি শুনিলাম ভবিষ্যতে তাহার মাধ্যমে কোন বড় রকমের
ঘটনা সংঘঠিত হইবে । ইহার পর যদি উহাকে আরবের লোকগন মারিয়া ফেলে তবে তোমাদের
কাজ অন্য কেহ করিবে । আর যদি তিনি আরবের উপর বিজয়ী হন, তবে তাহার সন্মান
হইবে, তোমার সন্মান, তাহার বাদশাহী হইবে তোমাদের বাদশাহী । তাহার অস্তিত্ব
তোমাদের জন্য সৌভাগ্য বহন করিয়া আনিবে ।( আর রাহীকুল মাখতূম-পৃঃ১৩৪-১৩৫)
রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোরাইশদিগকে বলিলেন, আপনারা
বলুন, আমি যদি এই রুপ কোন কথা পেশ করি, যে কথা গ্রহন করিলে আপনারা আরবের
বাদশাহ হইবেন এবং অন্যরাও আপনাদের অধিনে থাকিবে, তখন আপনারা কি করিবেন?
অন্য বর্ণনায় রহিয়াছে যে, তিনি আবু তালিবকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, আমি
তাহাদের নিকিট এই রুপ একটি কথা স্বীকারোক্তি চাহি । যদি যাহারা সেই
স্বীকারোক্তি করে তাহা হইলে সমগ্র আরব তাহাদের অধিনস্ত হইবে এবং অন্যরাও
তাহাদিগকে কর প্রদান করিবে । এক বর্ণনায় রহিয়াছে যে, তিনি বলিলেন, হে চাচা
আপনি উহা দিগিকে একটি বিষয়ের প্রতি ডাকুন তাহাতে উহাদের মঙ্গল হইবে । আবু
তালিব জিজ্ঞাসা করিলেন উহাদিগকে তুমি কোন বিষয়ের ব্যাপারে ডাকিতে চাহ? সুলে
পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিলেন, আমি উহা দিগকে এমন একটি বিষয়ের
প্রতি ডাকিতে চায়, উহারা তাহা গ্রহিন করিলে সমগ্র আরব উহাদের অনুগত হইয়া
যাইবে এবং অনারবের উপরও উহাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইবে । ইবনে ইসহাক বর্ণনা
করিয়াছেন যে, রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিলেন, আপনারা
শুধু একটি কথা মানিয়া লন । যাহার ফলে আপনারা আরবের শাসক হইয়া যাইবেন এবং
অনারব আপনাদের নিয়ন্ত্রনের মধ্যে চলিয়া আসিবে । এ প্রাস্তাব শুনার পর
কোরাইশ প্রতিনিধি দল থমকিয়া উঠিল । তাহারা অবাক বিস্ময়ে ভাবিতে লাগিল যে,
মাত্র একটি কথা মানিয়া লইলে যদি এত বড় লাভ হয় তবে তাহা কিভাবে উপেক্ষা করা
যায়? আবু জেহেল বলিল, আচ্ছা তোমার সেই কথা বল । তোমার পিতার সপথ এই ধরনের
শুধু একটি কথা কেন দশটি কথা শুনিলেও আমরা তাহা মানিয়া লইব । রাসুলে
পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিলেন, আপনারা বলুন “লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহু” অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নাই । এ কথা শুনিয়া কোরাইশরা
হাতে তালি দিয়া বলিয়া উঠিল, মুহাম্মদ আমরা কি তোমার এক খোদা মানিয়া লইব?
আসলে খুবই অদ্ভূদ কথা বল ।( আর রাহীকুল মাখতূম-পৃঃ১৪১)
এখানে, ‘ওতবা ওরফে অলীদ বলিল, হে ভাতিজা ! তুমি যাহা প্রচার করিতেছ,যদি তাহার বিনিময়ে’
তুমি যাহা প্রচার করিতেছ-এই যাহাটা কি? কি প্রচার করছিল রাসুল(সাঃ)? এর
উত্তর উপরেই দেওয়া আছে, তা হচ্ছে- ‘তুমি এমন একটি বিষয়(আল্লাহ ব্যতিত কোন
উপাস্য নাই–) প্রচার করিতেছ, যাহার কারনে কওমের মধ্যে বিভেত-বিশৃঙ্খলা এবং
অনৈক্যের সৃষ্টি হইয়াছে । তুমি কওমের নেতৃস্থানীয় জ্ঞানী লোক দিগকে নির্বোধ
বলিয়া অভিহিত করিয়াছ । তাহাদের উপাস্য দিগকে নানাভাবে সমালোচনা করিতেছ ।
তাহাদের ধর্ম বিশ্বাসকে ভ্রান্ত এবং বাতিল বলিয়া ঘোষনা করিয়াছ । তাহাদের
পূর্ব পুরুষদিগকে কাফির আখ্যা দিয়াছ’
এই যাহার বিনিময়ে বাদশাহ বানাইতে চেয়েছিল, তাই রাসুল(সাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) তাদের ঐ লেজ কাটা বাদশাহ হতে চান নাই, যেমন আমাদের সমাজে একটা
কথা প্রচলিত আছে যে- ‘বিচার মানলাম কিন্তু তালগাছ আমার’ যেমনটি উপরে বলা
হয়েছে- ‘তুমি যাহা প্রচার করিতেছ,– তাহার বিনিময়ে——— আমাদের যাবতীয় বিষয়
ব্যাপার তুমিই ফায়সালা করিবে’ নতুবা এই যাহা বা যাহার প্রচার করা হচ্ছিল
তাহাই ছিল বাদশাহ হওয়ার সিঁড়িঁ, যেটা রাসুল(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
নিজেই বলেছেনঃ ‘ইবনে ইসহাক বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলিলেন, আপনারা শুধু একটি কথা মানিয়া লন । যাহার ফলে আপনারা
আরবের শাসক হইয়া যাইবেন এবং অনারব আপনাদের নিয়ন্ত্রনের মধ্যে চলিয়া আসিবে ।
এ প্রাস্তাব শুনার পর কোরাইশ প্রতিনিধি দল থমকিয়া উঠিল । তাহারা অবাক
বিস্ময়ে ভাবিতে লাগিল যে, মাত্র একটি কথা মানিয়া লইলে যদি এত বড় লাভ হয় তবে
তাহা কিভাবে উপেক্ষা করা যায়? আবু জেহেল বলিল, আচ্ছা তোমার সেই কথা বল ।
তোমার পিতার সপথ এই ধরনের শুধু একটি কথা কেন দশটি কথা শুনিলেও আমরা তাহা
মানিয়া লইব । রাসুলে পাক(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিলেন, আপনারা বলুন
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নাই’
কেন থমকিয়া উঠিল কোরাইশ প্রতিনিধি দল? কারন তারা চিন্তা করল, কি এমন কথা? যা মানিয়া নিলেই আরবের বাদশাহ হওয়া যাবে ।
আজকে যারা রাষ্ট্রের নেতা হতে চায় তারা কি ঐ যাহার বিনিময়ে নেতা হতে
চায়, নাকি যাহাকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নেতা হতে চায়, তার পরেও প্রশ্ন
থেকে যায়, তাদের উদ্দেশ্য কি নেতা হওয়া, নাকি ঐ যাহাকে প্রতিষ্ঠিত করতে
গিয়ে নিজেকে নেতা সাজতে হচ্ছে ।তাও নিজে নেতা হতে চাওয়া ইসলাম বহির্ভূত,তাই
কোন নেতাই নিজে নেতা হতে চান না, অন্যেরা জোর করে দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় ।
আপনি(আহলে হাদীছ) হয়ত বলবেন, আমাদের দায়িত্ব দাওয়াত দেওয়া,বাদশাহ করার
মালিক আল্লাহ । কথাটা সত্য কিন্তু রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
দাওয়াত দিয়েছিলেন ঐ ব্যক্তিদের যারা বলছিল-‘বিচার মানি না, তালগাছ আমাদের’
আর আজকে বাংলাদেশে আমরা যাদের দাওয়াত দিতেছি তারা বলছে-‘বিচার মানি তালগাছ
আমাদের’
লেখাটি মনে হয় একটু জটিল হয়ে গেল তাই একটু সহজ করে দেই-
রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাওয়াত দিয়েছিলেন ঐ ব্যক্তিদের
যারা বলছিল-আমাদের উপাস্য মুর্তি, আর আমরা দাওয়াত দেই তাদের যারা বলে-
আমাদের উপাস্য আল্লাহ , তারা নামাযও পড়ে, হজ্জও করে—-,কিন্তু সমাজে আল্লাহর
আইন প্রতিষ্ঠা করে না, যারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের হত্যা করে, কেউ কেউ
আবার বলে-‘এবার মা দেবী গজে চরে আসছে তাই ফসল ভাল হয়েছে’
আপনারা(আহলে হাদীছ) আবার বলেন, শাসকের আনুগত্য করার কথা, কিন্তু তা কখন
করা যাবে না, তা বলেন না, আর যে শাসক বললঃ ‘এবার মা দেবী গজে চরে আসছে তাই
ফসল ভাল হয়েছে’ তার আনুগত্য কতক্ষন করা যাবে তাও বলেন না, মনে করেছিলেন,
আপনারা ভাল থাকবেন তাও হলো না, এবার তো আপনাদেরও ছাড়ছে না, তাও কথা বলছেন
না, কবে হবে আপনাদের কথা বলার সময়-অপেক্ষায় রইলাম ।